Posts

বাংলাদেশে নতুন ব্যবসার জন্য আইন, কর ও লাইসেন্সিং ম্যাপ

বাংলাদেশে নতুন ব্যবসার জন্য আইন, কর লাইসেন্সিং ম্যাপ: একটি বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণ

 

মো. জয়নাল আব্দীন
প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী, ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট বাংলাদেশ (T&IB)
এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর, অনলাইন ট্রেনিং একাডেমি (OTA)
সেক্রেটারি জেনারেল, ব্রাজিল বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (BBCCI)

 

 

প্রথম অধ্যায়: সূচনা, রোডম্যাপ এবং আইনগত কাঠামো নির্বাচন

১.১. নির্বাহী সারসংক্ষেপ রোডম্যাপ

বাংলাদেশে একটি নতুন ব্যবসায়িক উদ্যোগ শুরু করার প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রক পরিপালন ও আইনি কাঠামোর সঠিক নির্বাচনের উপর নির্ভরশীল। সফলভাবে কার্যক্রম শুরু করার জন্য প্রধানত তিনটি অপরিহার্য ধাপ অতিক্রম করতে হয়: ১. যথাযথ আইনি কাঠামো নির্বাচন (যেমন: একক মালিকানা বনাম লিমিটেড কোম্পানি), ২. কোর রেজিস্ট্রেশন (ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন, এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ভ্যাট/বিআইএন), এবং ৩. কোম্পানির নামে কর্পোরেট ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা।

 

এই বিশেষজ্ঞ মানচিত্রটি উদ্যোক্তাকে দ্রুততম সময়ে আইনি বাধ্যবাধকতা এবং প্রশাসনিক জটিলতাগুলি চিহ্নিত করতে সহায়তা করে। একজন বিশ্লেষকের দৃষ্টিতে, ব্যবসার ভবিষ্যৎ প্রসার, পুঁজি সংগ্রহ এবং দায়বদ্ধতার সুরক্ষার ওপর নির্ভর করে কাঠামোগত সিদ্ধান্ত শুরুতেই গ্রহণ করা আবশ্যক।

 

একটি উচ্চ-স্তরের মানচিত্র নিম্নরূপ:

ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরুর আইনি রোডম্যাপ

 

স্তর প্রধান পদক্ষেপ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আনুমানিক সময়সীমা
স্তর ১: কাঠামো নির্বাচন ব্যবসার ধরন অনুযায়ী আইনি কাঠামো নির্ধারণ (যেমন: একক মালিকানা, অংশীদারি, পিএলসি) ১-২ দিন
স্তর ২: কোর রেজিস্ট্রেশন নাম ছাড়পত্র (কোম্পানির জন্য), RJSC নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, ই-টিআইএন (TIN), ভ্যাট/ই-বিআইএন (BIN) RJSC, সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা, NBR ১০-২০ কার্যদিবস (কোম্পানির জন্য)
স্তর ৩: আর্থিক পরিচিতি কর্পোরেট ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৫-৭ কার্যদিবস
স্তর ৪: বিশেষ অনুমোদন পরিবেশগত ছাড়পত্র (ECC), খাদ্য লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, বিআইডিএ (BIDA) নিবন্ধন DoE, BFSA, Fire Service, BIDA সময়সাপেক্ষ (খাতভেদে ভিন্ন)

 

১.২. বাংলাদেশে ব্যবসার আইনি ভিত্তি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহ

বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার আইনি ভিত্তি নির্দিষ্ট আইন ও অধ্যাদেশ দ্বারা পরিচালিত হয়। মূলত, যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠনের ক্ষেত্রে কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ [1] এবং অংশীদারি কারবারের জন্য অংশীদারি আইন, ১৯৩২ [2] মূল আইনি কাঠামো প্রদান করে। সম্প্রতি, আয়কর আইন, ২০২৩ সহ অন্যান্য শ্রম ও পরিবেশগত আইনগুলি ব্যবসায়িক পরিপালন ও দায়বদ্ধতা সুসংহত করেছে [3]। দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য Trade Organisations Ordinance, 1961 বাতিল করে যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, যা বাণিজ্য সংগঠনসমূহের কার্যক্রম এবং দায়বদ্ধতা সুসংহত করে [4]।

 

ব্যবসায়িক নিয়ন্ত্রণের প্রধান কর্তৃপক্ষগুলো হলো:

  1. Registrar of Joint Stock Companies and Firms (RJSC):এটি যৌথ মূলধনী কোম্পানি, অংশীদারি ফার্ম এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক সত্তার নিবন্ধন প্রক্রিয়া পরিচালনা করে [5]।
  2. সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা:স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবসার বৈধতা, বিশেষত ট্রেড লাইসেন্স প্রদান ও নবায়নের দায়িত্ব তাদের [6, 7]।
  3. National Board of Revenue (NBR):জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আয়কর (TIN) এবং মূল্য সংযোজন কর (VAT/BIN) সংক্রান্ত সকল পরিপালন ও শুল্ক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করে [8, 9]।
  4. Bangladesh Investment Development Authority (BIDA):দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ওয়ান-স্টপ সার্ভিস (OSS) প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিভিন্ন অনুমোদন ও সুবিধা প্রদান করে [10, 11]।

 

১.৩. ব্যবসায়িক কাঠামোর তুলনামূলক বিশ্লেষণ নির্বাচন

নতুন উদ্যোক্তার জন্য প্রথম কৌশলগত সিদ্ধান্ত হলো ব্যবসার আইনি কাঠামো নির্বাচন করা। এই নির্বাচন নির্ভর করে ব্যবসার আকার, পুঁজির উৎস, ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতা এবং প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধির ওপর।

 

ক. একক মালিকানা (Sole Proprietorship)

একক মালিকানা হলো ব্যবসায়িক কাঠামোগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম আনুষ্ঠানিক এবং দ্রুততম সূচনাযোগ্য পদ্ধতি। এর প্রধান আইনি বাধ্যবাধকতা হলো স্থানীয় সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করা [12]। যেহেতু এটি একক ব্যক্তির দ্বারা পরিচালিত হয়, এর পরিচালন প্রক্রিয়াও সরল ও ব্যয়-সাশ্রয়ী। তবে, এর সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো ‘অসীম দায়’ (Unlimited Liability)। এই কাঠামোতে ব্যবসার দায়-দেনা এবং ঋণ পরিশোধের জন্য মালিক ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকেন, ফলে তার ব্যক্তিগত সম্পদ ব্যবসায়িক ঝুঁকির আওতায় চলে আসে [12]।

 

খ. অংশীদারি ফার্ম (Partnership Firm)

অংশীদারি ব্যবসা অংশীদারি আইন, ১৯৩২ অনুসারে পরিচালিত হয়। এই কাঠামোতে কমপক্ষে ২ জন এবং সর্বোচ্চ ২০ জন অংশীদার থাকতে পারে। তবে, ব্যাংকিং ব্যবসার উদ্দেশ্যে গঠিত অংশীদারি ফার্মের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অংশীদার সংখ্যা ১০ জনে সীমিত [1, 2]। অংশীদারি ফার্ম RJSC-তে নিবন্ধন করা ঐচ্ছিক হলেও, আইনগতভাবে কার্যকরিতা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা এবং সরকারি স্বীকৃতি লাভের জন্য সাধারণত নিবন্ধন করার পরামর্শ দেওয়া হয় [13]। এই কাঠামোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, একক মালিকানার মতোই অংশীদারদের দায় অসীম থাকে [5]।

 

গ. প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি (Private Limited Company – PLC)

প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ অনুযায়ী গঠিত হয় এবং এর জন্য কমপক্ষে ২ জন প্রতিষ্ঠাতা বা পরিচালক প্রয়োজন [1, 14]। এই কাঠামোটি তুলনামূলকভাবে প্রশাসনিকভাবে জটিল এবং শুরু করতে বেশি সময় ও খরচ প্রয়োজন। তবে, এর প্রধান সুবিধা হলো ‘সীমিত দায়’ (Limited Liability)। এই সুবিধা অনুযায়ী, সদস্যগণের দায় তাদের মালিকানাধীন শেয়ারের অপরিশোধিত অংশ পর্যন্ত সীমিত রাখা হয় [1]।

 

সীমিত দায় কাঠামো আন্তর্জাতিক লেনদেন, বড় ব্যাংক ঋণ গ্রহণ এবং বিদেশী অংশীদারিত্বের জন্য অধিক বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করে। যেসব উদ্যোক্তা তাদের ব্যক্তিগত সম্পদ সুরক্ষিত রাখতে চান এবং যাদের ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির জন্য ভবিষ্যতে বড় বিনিয়োগের প্রয়োজন, তাদের জন্য PLC-এর উচ্চতর নিবন্ধন ফি এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়া মেনে নেওয়া একটি অপরিহার্য বাধ্যবাধকতা [5]। অন্যদিকে, ছোট আকারের অনলাইন ব্যবসা বা স্বল্প পুঁজির উদ্যোগের জন্য প্রশাসনিক জটিলতা কমাতে একক মালিকানা বেছে নেওয়া যেতে পারে।

 

ব্যবসায়িক কাঠামোর তুলনামূলক বিশ্লেষণ

বৈশিষ্ট্য একক মালিকানা অংশীদারি ফার্ম প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি
আইনগত ভিত্তি স্থানীয় বিধি (ট্রেড লাইসেন্স) অংশীদারি আইন, ১৯৩২ [2] কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ [1]
দায়বদ্ধতা অসীম অসীম সীমিত (Limited by Share) [1]
সদস্য সংখ্যা ১ জন ২-২০ জন (ব্যাংকিংয়ে ১০) [2] ২-৫০ জন
নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা আরজেএসসি (ঐচ্ছিক/প্রস্তাবিত) আরজেএসসি (বাধ্যতামূলক) [5]
আনুমানিক সময় (কোর) ২-৫ কর্মদিবস [6] ৭-১৫ কর্মদিবস ১০-২০ কর্মদিবস [14]
বাংলাদেশে নতুন ব্যবসার জন্য আইন, কর ও লাইসেন্সিং ম্যাপ

বাংলাদেশে নতুন ব্যবসার জন্য আইন, কর ও লাইসেন্সিং ম্যাপ

দ্বিতীয় অধ্যায়: RJSC এবং ট্রেড লাইসেন্স: কোর রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া

যৌথ মূলধনী কোম্পানি (PLC) গঠনের জন্য RJSC-তে নিবন্ধন একটি বিস্তারিত প্রক্রিয়া, যা আইনগত পরিচিতি নিশ্চিত করে।

 

২.১. কোম্পানি নিবন্ধন প্রক্রিয়া (RJSC) – প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির জন্য

কোম্পানি নিবন্ধনের জন্য উদ্যোক্তাদের Registrar of Joint Stock Companies and Firms (RJSC)-এর নির্ধারিত ধাপ অনুসরণ করতে হয় [5, 14]।

 

ধাপ ১: নাম অনুমোদন (Name Clearance)

প্রথমেই RJSC-এর ওয়েবসাইটে (www.roc.gov.bd) লগইন করে প্রস্তাবিত কোম্পানির নামের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে হয়। এই আবেদনের জন্য সাধারণত ১,০০০ টাকা ফি প্রদান করতে হয় [14]। RJSC অনুমোদন দিলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিবন্ধনের জন্য মূল আবেদন দাখিল করতে হয় [15]। যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন না করা হয়, তবে ছাড়পত্র বাতিল হয়ে যায়।

 

ধাপ ২: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টেশন প্রস্তুত ও দাখিল

কোম্পানি নিবন্ধনের জন্য কাঠামোগত এবং অভ্যন্তরীণ নিয়মের নথি প্রস্তুত করা অত্যাবশ্যক। এর মধ্যে রয়েছে:

 

  • Memorandum of Association (MoA):এই নথিতে কোম্পানির উদ্দেশ্য, ক্ষমতা এবং অনুমোদিত মূলধন (Authorized Capital) সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে [14]।

 

  • Articles of Association (AoA):এই নথিতে কোম্পানির অভ্যন্তরীণ নিয়মাবলী, যেমন—পরিচালকদের ক্ষমতা, শেয়ার লেনদেন পদ্ধতি ইত্যাদি বর্ণিত থাকে [14]।

 

  • নির্দিষ্ট ফরম দাখিল:কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনি ফরমসমূহ পূরণ করে জমা দিতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে ফরম IX (ডিরেক্টরদের সম্মতি) [14, 16], ফরম XII (প্রথম পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডারদের তালিকা) [14, 16], এবং ফরম I (নিবন্ধনের ঘোষণা) [16, 17]।

 

  • অন্যান্য কাগজপত্র:প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানার প্রমাণ (যেমন: ভাড়া চুক্তি বা ইউটিলিটি বিল), শেয়ারহোল্ডার ও পরিচালকদের জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের কপি, এবং সরকারি নির্ধারিত ফি পরিশোধের ট্রেজারি চালানের কপি জমা দিতে হয় [14]।

 

ধাপ ৩: RJSC-তে অনলাইন আবেদন এবং সার্টিফিকেট সংগ্রহ

প্রয়োজনীয় তথ্য ও ডকুমেন্টেশন আপলোড করার পর RJSC পোর্টালে (http://app.roc.gov.bd) অনলাইনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হয় [15, 18]। কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই শেষে অনুমোদন দিলে Certificate of Incorporation ইস্যু করে [14]। এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ায় সাধারণত ৭-১০ কার্যদিবস সময় লাগে [14]।

 

২.২. RJSC নিবন্ধন ফি কাঠামো (মূলধনের ভিত্তিতে)

কোম্পানি নিবন্ধনের জন্য সরকারি ফি অনুমোদিত মূলধন (Authorized Capital)-এর ওপর নির্ভরশীল। অনুমোদিত মূলধন হলো সংঘস্মারক দ্বারা কোম্পানিকে যে সর্বোচ্চ মূলধন ইস্যু করার অনুমোদন দেওয়া হয় [19]।

 

RJSC ফিস কাঠামোতে অনুমোদিত মূলধনের বিভিন্ন স্তর রয়েছে [20]:

  • প্রথম ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত অনুমোদিত মূলধনের জন্য ফি হলো ৩৬০.০০ টাকা।
  • পরবর্তী ২০,০০১ টাকা থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি ১০,০০০ বা তার অংশবিশেষের জন্য অতিরিক্ত ১৮০.০০ টাকা ফি প্রযোজ্য।
  • ৫০,০০১ টাকা থেকে ১,০০০,০০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি ১০,০০০ বা তার অংশবিশেষের জন্য অতিরিক্ত ৪৫.০০ টাকা ফি প্রযোজ্য [20]।

 

এছাড়াও, নিবন্ধনের সময় সংঘস্মারক ও সংঘবিধি সহ মোট ছয়টি নথি দাখিল করতে হয়, যার জন্য প্রতি নথির ক্ষেত্রে ৪০০.০০ টাকা হিসাবে মোট ২,৪০০.০০ টাকা ফি দিতে হয় [21]।

 

উদ্যোক্তারা প্রায়শই রেজিস্ট্রেশন খরচ কমাতে প্রাথমিক অনুমোদিত মূলধন কম দেখান। যদিও এটি প্রাথমিক ব্যয় হ্রাস করে, তবে ভবিষ্যতে যখন কোম্পানির বড় ধরনের পুঁজি সংগ্রহের প্রয়োজন হয় এবং মূলধন বাড়ানোর প্রয়োজন হয়, তখন আবার নতুন করে ফিস প্রদান এবং আইনি প্রক্রিয়া পুনরাবৃত্তি করতে হতে পারে। তাই কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক সামর্থ্য এবং প্রবৃদ্ধির পরিকল্পনা বিবেচনা করে কৌশলগতভাবে মূলধনের পরিমাণ নির্ধারণ করা উচিত।

 

প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি নিবন্ধন ফি (RJSC)

 

অনুমোদিত মূলধন (BDT) প্রতি ১০,০০০ বা তার অংশবিশেষের জন্য অতিরিক্ত ফি (BDT)
২০,০০০ পর্যন্ত প্রযোজ্য নয় (৩৬০.০০) [20]
২০,০০১ – ৫০,০০০ পর্যন্ত ১৮০.০০
৫০,০০১ – ১,০০০,০০০ পর্যন্ত ৪৫.০০
দলিল দাখিল ফি প্রতিটি ফর্মের জন্য ৪০০.০০

 

২.৩. ট্রেড লাইসেন্স (Trade License) প্রাপ্তি

ট্রেড লাইসেন্স হলো স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবসা পরিচালনার জন্য সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা কর্তৃক প্রদত্ত বাধ্যতামূলক অনুমোদন, যা সিটি কর্পোরেশন আদর্শ কর তফসিল, ২০১৬ এবং সিটি কর্পোরেশন (কর) বিধি, ২০০৯ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত [6, 7]। এই লাইসেন্সটি বিশেষভাবে শুধুমাত্র লাইসেন্সধারী ব্যক্তির নামে প্রদান করা হয় এবং কোনোভাবেই হস্তান্তরযোগ্য নয় [7]।

 

আবেদন প্রক্রিয়া ও ডকুমেন্টেশন

বর্তমানে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় (DNCC, DSCC) অনলাইনে ই-রেভিনিউ পোর্টালে (যেমন: DNCC-এর জন্য https://erevenue.dncc.gov.bd/cp/cportal/cp/northcc.aspx) নতুন ইউজার খুলে আবেদন করা যায় [6, 22]। আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে:

 

  • মালিকের ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
  • ভাড়ার চুক্তিপত্র বা মালিকানা প্রমাণের জন্য দলিল/পর্চা।
  • হালনাগাদ হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
  • সীমিত দায় কোম্পানির ক্ষেত্রে, মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেলস (MoA) এবং সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশনের কপি জমা দিতে হয় [6, 7]।

 

নির্দিষ্ট ধরনের ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের ওপর নির্ভরশীল। উদাহরণস্বরূপ, শিল্প কারখানার ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃক লাইসেন্স, ক্লিনিক বা হাসপাতালের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন, এবং রিক্রুটিং এজেন্সির ক্ষেত্রে মানবসম্পদ রপ্তানি ব্যুরো কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্সের ফটোকপি ট্রেড লাইসেন্স আবেদনের সময় চাওয়া হয় [6, 7]। এর মাধ্যমে ট্রেড লাইসেন্স প্রদানকারী স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে যে ব্যবসাটি অন্যান্য বাধ্যতামূলক জাতীয় পরিপালন শর্ত পূরণ করছে।

 

ফি এবং সময়সীমা

লাইসেন্স ও বিজ্ঞাপন সুপারভাইজার কর্তৃক যাচাই-বাছাইয়ের পর অনুমোদনের জন্য ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন পাঠানো হয়। অনুমোদিত হলে, নির্ধারিত ফি পরিশোধের জন্য আবেদনকারীকে এসএমএস ও ইমেইলের মাধ্যমে জানানো হয় [6]। ট্রেড লাইসেন্স ফি ব্যবসায়ের ধরন অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশন আদর্শ কর তফসিল, ২০১৬ এর ১০ (৪) ধারা অনুযায়ী নির্ধারিত হয় [6]। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে, অনুমোদনের সময়সীমা সাধারণত ২ কর্মদিবস [6]। নবায়ন ফি সাধারণত নতুন লাইসেন্সের সমপরিমাণ হয় [7]।

Top 50 Common Questions About Business Consultants

Top 50 Common Questions About Business Consultants

তৃতীয় অধ্যায়: কর ও আর্থিক পরিপালন (টিআইএন, ভ্যাট, বিআইএন)

আইনি পরিচিতি পাওয়ার পর, ব্যবসার পরবর্তী অপরিহার্য ধাপ হলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (NBR) অধীনে কর ও ভ্যাট পরিপালন নিশ্চিত করা।

 

৩.১. ই-টিআইএন (e-TIN) নিবন্ধন

করদাতা হিসেবে নিবন্ধন প্রক্রিয়া দ্রুত ও সহজতর করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) ই-টিআইএন (e-TIN) রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি প্রবর্তন করেছে [8]। সকল ব্যবসায়িক সত্তা এবং করযোগ্য আয় রয়েছে এমন ব্যক্তির জন্য টিআইএন বাধ্যতামূলক।

 

নিবন্ধন প্রক্রিয়া ও গুরুত্ব

অনলাইনে টিআইএন রেজিস্ট্রেশন বা রি-রেজিস্ট্রেশনের জন্য www.incometax.gov.bd ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে হয় [8]। প্রাপ্ত বয়স্ক বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য জাতীয় পরিচিতি নম্বর বা পাসপোর্ট নম্বর (ইস্যু ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখসহ) প্রয়োজন হয় [8]।

 

টিআইএন নিবন্ধন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি বিভিন্ন সরকারি ও বাণিজ্যিক পরিষেবা লাভের পূর্বশর্ত হিসেবে কাজ করে। NBR বর্তমানে পরিপালন জোরদার করার জন্য ‘Proof of Submission of Return’ (PSR) বা আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণ দাখিল করা বাধ্যতামূলক করেছে [23]। PSR হলো একটি স্বীকৃতি রসিদ, সিস্টেম জেনারেটেড সার্টিফিকেট বা DCT কর্তৃক ইস্যুকৃত কর সার্টিফিকেট, যা নিশ্চিত করে যে করদাতা তার আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন। এর অর্থ হলো, কেবল টিআইএন থাকলেই হবে না, নিয়মিতভাবে রিটার্ন দাখিল (যা বার্ষিক কর দিবস বা ১৫ সেপ্টেম্বর/১৫ জানুয়ারি-এর মধ্যে করতে হয় [23, 24]) বাধ্যতামূলক হয়ে উঠেছে, অন্যথায় ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন বা ব্যাংক লেনদেন সহ মৌলিক পরিষেবা লাভে বাধা সৃষ্টি হতে পারে।

 

৩.২. ভ্যাট (VAT/মূসক) এবং ই-বিআইএন (e-BIN) নিবন্ধন

মূল্য সংযোজন কর (VAT) হলো একটি পরোক্ষ কর যা নিবন্ধিত ব্যক্তির মাধ্যমে ভোক্তা প্রদান করে থাকে [25]। NBR-এর মূসক বিভাগ এই পরিপালন পরিচালনা করে।

 

ভ্যাট নিবন্ধনের থ্রেশহোল্ড ও বাধ্যবাধকতা

সকল ব্যবসার জন্য ভ্যাট নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয়। NBR একটি স্পষ্ট থ্রেশহোল্ড নির্ধারণ করেছে:

  1. ভিএটি নিবন্ধন (BIN):যে ব্যবসার বার্ষিক টার্নওভার ৩ কোটি টাকার বেশি, তার জন্য ভিএটি নিবন্ধন (BIN) বাধ্যতামূলক [26]।
  2. টার্নওভার ট্যাক্স তালিকাভুক্তি (Turnover Tax):বার্ষিক বিক্রয় মূল্য ৫০ লক্ষ থেকে ৩ কোটি টাকার মধ্যে হলে টার্নওভার ট্যাক্সের জন্য তালিকাভুক্ত হতে হবে। বার্ষিক বিক্রয় মূল্য ৫০ লক্ষ টাকার নিচে হলে সাধারণত অব্যাহতি পাওয়া যায় [25]।
  3. শর্তাধীন বাধ্যবাধকতা:টার্নওভারের পরিমাণ নির্বিশেষে, আমদানিকারক, রপ্তানিকারক এবং উৎপাদনকারীদের জন্য ভ্যাট নিবন্ধন বাধ্যতামূলক [26]। এর অর্থ হলো, যদি কোনো ছোট ই-কমার্স ব্যবসা, যার বার্ষিক টার্নওভার ৩ কোটি টাকার কম, পণ্য আমদানির সাথে যুক্ত হয়, তবে সেটিকে পূর্ণ ভিএটি পরিপালনের আওতায় আসতে হবে, যা প্রশাসনিক ব্যয় ও জটিলতা বাড়ায়।

 

নিবন্ধন প্রক্রিয়া

NBR-এর ই-বিন (e-BIN) সিস্টেমের মাধ্যমে অনলাইনে ভিএটি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হয় [9, 27]। এই প্রক্রিয়ায় ট্রেড লাইসেন্স সার্টিফিকেট, টিআইএন সার্টিফিকেট, NID, ব্যবসার মালিকানার প্রমাণ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, এবং লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে RJSC-এর ডকুমেন্টেশন (MoA ও AoA) জমা দিতে হয় [26]। আবেদনপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করার পর তিন কার্যদিবসের মধ্যে একটি বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (BIN) সহ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট জারি করা হয় [25]।

 

৩.৩. কর্পোরেট ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা

আইনি ও কর নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পর কর্পোরেট ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে, ব্যবসার দায় সীমিত রাখার আইনি সুবিধা বজায় রাখার জন্য ব্যবসায়িক লেনদেনকে ব্যক্তিগত লেনদেন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করা অপরিহার্য। ব্যাংক হিসাব খোলার শর্তাবলী ব্যবসার কাঠামোর ভিত্তিতে ভিন্ন হয় [28, 29]।

 

প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির জন্য প্রয়োজনীয়তা:

  • ব্যাংকের নির্দিষ্ট আবেদনপত্র।
  • কোম্পানির মেমোরান্ডাম ও আর্টিকেল অব এসোসিয়েশনের সার্টিফাইড কপি।
  • ট্রেড লাইসেন্সের কপি।
  • আয়কর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যুকৃত ট্যাক্স আইডিন্টিফিকেশন নাম্বার (টিআইএন)।
  • পরিচালকদের নাম, ঠিকানা, নিয়োগপত্র এবং স্বাক্ষরকারীদের ছবি ও নমুনা স্বাক্ষর [28]।

 

অংশীদারি ফার্মের জন্য প্রয়োজনীয়তা:

অংশীদারত্বের চুক্তিপত্র, অংশীদারদের সভার নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের অনুলিপি, ট্রেড লাইসেন্সের কপি এবং অংশীদারদের পরিচিতিমূলক তথ্য (ব্যক্তিগত হিসাব খোলার নিয়মানুসারে) প্রয়োজন [28]।

 

কোর রেজিস্ট্রেশন ও আন্তঃনির্ভরশীলতা

 

ক্রমিক রেজিস্ট্রেশন/লাইসেন্স কর্তৃপক্ষ এটি কেন প্রয়োজন? পরবর্তী ধাপে প্রভাব (Dependency)
RJSC নিবন্ধন (কোম্পানি) RJSC আইনি পরিচিতি, সীমিত দায় ট্রেড লাইসেন্স, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, টিন (কর্পোরেট) [28]
ট্রেড লাইসেন্স সিটি কর্পোরেশন স্থানীয় ব্যবসায়িক বৈধতা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, টিন/ভ্যাট, অন্যান্য লাইসেন্স [7]
ই-টিআইএন (TIN) NBR কর পরিপালনের জন্য আইনি পরিচিতি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, PSR, ভ্যাট নিবন্ধন, লাইসেন্স নবায়ন [8, 23]
ই-বিআইএন (VAT) NBR পরোক্ষ কর পরিপালন (টার্নওভার সাপেক্ষে) আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, এনবিআর থেকে বিশেষ ছাড়পত্র [26]

 

চতুর্থ অধ্যায়: কর হার, বিয়োজন এবং কৌশলগত আর্থিক পরিকল্পনা

কর কাঠামো ব্যবসায়িক মুনাফা এবং প্রবৃদ্ধির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশে আয়কর আইন, ২০২৩ অনুযায়ী কর হার ও বিয়োজনের নিয়ম নির্ধারিত হয়।

 

৪.১. কর্পোরেট আয়কর হার (Corporate Income Tax – CIT)

বাংলাদেশে কর্পোরেট আয়কর হার কোম্পানির তালিকাভুক্তি এবং প্রকারভেদের ভিত্তিতে ভিন্ন হয় [30, 31]। এই বৈচিত্র্য সরকারের পুঁজি বাজারকে উৎসাহিত করার এবং স্বচ্ছতা বাড়ানোর নীতিকে প্রতিফলিত করে।

 

  • অতালিকাভুক্ত কোম্পানি (Non-Publicly Traded):সাধারণ কর্পোরেট আয়কর হার বর্তমানে ২৭.৫% [30, 31]।
  • তালিকাভুক্ত কোম্পানি (Publicly Traded):যেসব কোম্পানি স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত, তাদের জন্য কর হার কিছুটা কম (যেমন: ২২.৫% বা ২৫%), তবে এটি নির্ভর করে পরিশোধিত মূলধনের নির্দিষ্ট শতাংশ শেয়ারহোল্ডিং নিশ্চিত করা হয়েছে কিনা তার ওপর [30]।

 

৪.২. ব্যক্তিগত আয়কর হার এবং অংশীদারি ফার্মের ট্যাক্স স্ল্যাব

স্বাভাবিক ব্যক্তি, হিন্দু অবিভক্ত পরিবার এবং অংশীদারি ফার্মের ক্ষেত্রে মোট আয়ের উপর প্রগতিশীল করের হার নিম্নরূপ [32]:

 

  • প্রথম ৩,৫০,০০০/- টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর: শূন্য।
  • পরবর্তী ১,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর: ৫%।
  • পরবর্তী ৩,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর: ১০%।
  • পরবর্তী ৪,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর: ১৫%।
  • পরবর্তী ৫,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর: ২০%।
  • অবশিষ্ট মোট আয়ের উপর: ২৫% [32]।

 

বিশেষ কিছু করদাতার জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা বেশি নির্ধারিত আছে, যেমন: মহিলা করদাতা এবং ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতার জন্য ৪,০০,০০০/- টাকা, তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা এবং প্রতিবন্ধী স্বাভাবিক ব্যক্তির জন্য ৪,৭৫,০০০/- টাকা, এবং গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার জন্য ৫,০০,০০০/- টাকা [32]।

 

ন্যূনতম করের বিধানও রয়েছে। ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবস্থিত করদাতার জন্য ন্যূনতম কর ৫,০০০ টাকা, অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য ৪,০০০ টাকা এবং সিটি কর্পোরেশন ব্যতীত অন্যান্য এলাকার জন্য ৩,০০০ টাকা [32]।

 

৪.৩. ব্যবসা আয়ের ক্ষেত্রে অনুমোদিত বিয়োজনসমূহ (Allowable Deductions)

ব্যবসা থেকে আয় গণনার ক্ষেত্রে, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে পরিশোধিত ও নির্বাহকৃত ব্যয়সমূহ আইনত বিয়োজনযোগ্য। এই বিধানটি ব্যবসায়িক কার্যক্রমের প্রকৃত মুনাফার ওপর কর আরোপ নিশ্চিত করে।

 

স্বাভাবিক বিয়োজনসমূহ: এই ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে শুল্ক-করাদি, পৌর কর, ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা [33], ব্যবসার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত ভূমি বা আঙ্গিনার জন্য পরিশোধযোগ্য ভাড়া, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ অন্যান্য পরিষেবা ব্যয়, বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা ব্যয়, কর্মীদের প্রশিক্ষণ ব্যয়, আইনি ও নিরীক্ষা সেবার ব্যয়, এবং ব্যবসায়িক বিমা প্রিমিয়াম [33]।

 

বিশেষ বিয়োজনসমূহ ও কৌশলগত পরিকল্পনা:

  1. অবচয় ভাতা:সাধারণ অবচয় ভাতা, প্রারম্ভিক অবচয় ভাতা এবং ত্বরান্বিত অবচয় ভাতা তৃতীয় তফসিলের শর্তাবলী অনুযায়ী বিয়োজনযোগ্য হয় [33]।
  2. শ্রমিক কল্যাণ তহবিল:শ্রম আইন, ২০০৬ এর ধারা ২৩৪ অনুযায়ী অংশগ্রহণ তহবিল, কল্যাণ তহবিল এবং শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলে প্রদেয় অর্থ, যা প্রদর্শিত নীট ব্যবসায়িক মুনাফার ৫% (পাঁচ শতাংশ) এর অধিক নহে, তা বিয়োজনযোগ্য [33]।
  3. সুদ ব্যয়:ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে ধারকৃত মূলধনের উপর পরিশোধিত সুদ বা মুনাফার অংশ ব্যবসায়িক ব্যয় হিসাবে অনুমোদিত [33]। তবে, আইনি বিশ্লেষণ অনুযায়ী, যদি ধারকৃত অর্থের কোনো অংশ ব্যবসায়ের বাইরে অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়, তবে সেই অংশের উপর পরিশোধিত সুদ বা মুনাফা বিয়োজন হিসাবে অনুমোদিত হবে না [33]। এর মাধ্যমে NBR করদাতাদেরকে নিশ্চিতভাবে শুধুমাত্র ব্যবসায়িক বিনিয়োগের ব্যয়কেই বিয়োজন হিসেবে দেখানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করে। যথাযথ কর পরিপালনের জন্য প্রতিটি ব্যয়ের স্বপক্ষে ডকুমেন্টেশন থাকা অপরিহার্য।

 

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের জন্য রেয়াত: যে সকল ক্ষুদ্র বা কুটির শিল্প স্বল্প উন্নত বা সবচেয়ে কম উন্নত এলাকায় অবস্থিত এবং উৎপাদনের সাথে জড়িত, তারা উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধির সাপেক্ষে প্রদেয় আয়করের উপর ৫% বা ১০% পর্যন্ত রেয়াত লাভ করতে পারে [32]। এই বিধান আঞ্চলিক অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস এবং স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৌশলগত সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করে।

chamber of commerce

chamber of commerce

পঞ্চম অধ্যায়: বিশেষ লাইসেন্সিং ও নিয়ন্ত্রক জটিলতা

অনেক ব্যবসার জন্য শুধুমাত্র ট্রেড লাইসেন্স যথেষ্ট নয়; তাদের কার্যক্রমের প্রকৃতি, পরিবেশগত প্রভাব বা জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বিবেচনা করে খাতভিত্তিক বিশেষ অনুমোদন প্রয়োজন হয়। এই অনুমোদন প্রক্রিয়াগুলি স্টার্ট-আপের সময়সীমা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করতে পারে।

 

৫.১. পরিবেশগত ছাড়পত্র (Environmental Clearance Certificate – ECC)

শিল্প কারখানা বা প্রকল্পের পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাবের মাত্রা অনুযায়ী পরিবেশ অধিদপ্তর (DoE) থেকে পরিবেশগত ছাড়পত্র (ECC) নেওয়া বাধ্যতামূলক [34]। এটি ব্যবসার অবস্থান চিহ্নিতকরণ এবং পরিচালনা পদ্ধতি পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৯৭ অনুযায়ী হচ্ছে কিনা, তা নিশ্চিত করে।

 

শ্রেণীবিভাগ ও সময়সীমা

শিল্প প্রতিষ্ঠান বা প্রকল্পগুলিকে তাদের পরিবেশগত ঝুঁকির ভিত্তিতে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়:

  • সবুজ শ্রেণি:পরিবেশের উপর সামান্য প্রভাব ফেলে, ছাড়পত্রের মেয়াদ তিন বছর [34]।
  • কমলা, কমলাখ ও লাল শ্রেণি:পরিবেশের উপর গুরুতর প্রভাব ফেলে, ছাড়পত্রের মেয়াদ এক বছর [34]।

 

লাল শ্রেণির জটিলতা (Major Bottleneck)

লাল শ্রেণির শিল্প প্রতিষ্ঠান/প্রকল্পের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ ও বহু-ধাপযুক্ত। প্রথমে এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট (EIA) প্রণয়নের ToR (Terms of Reference) অনুমোদনসহ অবস্থানগত ছাড়পত্র নিতে হয়। অনুমোদিত ToR অনুযায়ী উদ্যোক্তা কর্তৃক প্রণীত EIA অনুমোদন সাপেক্ষে অবকাঠামো নির্মাণ করতে হয়। সবশেষে, EIA প্রতিবেদনে প্রস্তাবিত পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা (যেমন: বর্জ্য পরিশোধনাগার বা ETP) বাস্তবায়ন সাপেক্ষে চূড়ান্ত পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রদান করা হয় [34]।

 

এই EIA এবং ETP নকশা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) অনুমোদন এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ। প্রয়োজনীয় নথিপত্রের মধ্যে রয়েছে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন, IEE/EMP রিপোর্ট, উৎপন্ন দ্রব্যের প্রসেস ফ্লো ডায়াগ্রাম (Pollution Points উল্লেখপূর্বক), স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনাপত্তিপত্র, ট্রেড লাইসেন্স, এবং হালনাগাদ টিআইএন/ভ্যাট সার্টিফিকেট [35]। লাল শ্রেণির জন্য এই প্রক্রিয়া স্টার্ট-আপের সময়কে ১৫-২০ দিন থেকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।

 

৫.২. খাতভিত্তিক বাধ্যতামূলক লাইসেন্স (Sector-Specific Mandatory Licenses)

  1. খাদ্য ব্যবসা:খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সকল খাদ্য ব্যবসায়ীকে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ (BFSA) থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। লাইসেন্সিং কর্মকর্তা খাদ্য-স্থাপনা পরিদর্শন করার মাধ্যমে অনুমোদন চূড়ান্ত করতে পারেন [36]।
  2. শিল্প কারখানা ও নিরাপত্তা:শিল্প কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষের লাইসেন্স এবং অগ্নিনির্বাপণ প্রস্তুতি সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক [6, 7, 35]।
  3. স্বাস্থ্যখাত:ক্লিনিক অথবা ব্যক্তিগত হাসপাতালের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুমোদন অপরিহার্য [7]।
  4. মেধা সম্পদ সুরক্ষা (Intellectual Property):নতুন ব্যবসা, বিশেষত যারা নিজস্ব ব্র্যান্ড বা নকশা ব্যবহার করে, তাদের মেধা সম্পদ সুরক্ষার জন্য পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরে (DPDT) আবেদন করা উচিত [37]। ট্রেডমার্ক নিবন্ধনে নাম সার্চ (২০০০ টাকা + ভ্যাট), আবেদন (৫০০০ টাকা + ভ্যাট) এবং চূড়ান্ত নিবন্ধন (২০০০০ টাকা) সহ নির্দিষ্ট খরচ রয়েছে [38]। এই নিবন্ধনটি কোম্পানির ব্র্যান্ডের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করে।

 

৫.৩. শ্রম আইনের পরিপালন (Compliance with Labor Law, 2006)

শ্রমিক নিয়োগ, চাকুরীর শর্তাবলী, মজুরী পরিশোধ, নিরাপত্তা ও কল্যাণ সংক্রান্ত সকল বিষয় বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় [3]।

 

  • চাকুরীর শর্তাবলী:প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকগণের নিয়োগ ও তৎসংক্রান্ত আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়াদি এই আইনের বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হওয়া বাধ্যতামূলক। কোনো প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব চাকুরী বিধি থাকতে পারলেও, তা কোনো শ্রমিকের জন্য এই আইনের কোনো বিধান থেকে কম অনুকূল হতে পারবে না [39]।
  • নিয়োগ বিধি অনুমোদন:প্রতিষ্ঠানের মালিক কর্তৃক প্রণীত চাকুরীর বিধি অবশ্যই প্রধান পরিদর্শকের নিকট পেশ করতে হবে এবং তার অনুমোদন ব্যতীত তা কার্যকর করা যাবে না [39]। এটি নিশ্চিত করে যে মালিকপক্ষ নিজস্ব সুবিধা অনুযায়ী শ্রমিক-নীতির অপব্যবহার করতে পারবে না। নতুন উদ্যোক্তাদের উচিত অভ্যন্তরীণ নীতিমালা তৈরির সময় শ্রম আইন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া।
  • ঠিকাদার সংস্থা রেজিস্ট্রেশন:চুক্তিতে কর্মী সরবরাহকারী (যেমন: নিরাপত্তাকর্মী, গাড়িচালক) ঠিকাদার সংস্থাগুলিকে সরকার থেকে রেজিস্ট্রেশন নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে [39]।

 

ষষ্ঠ অধ্যায়: বিনিয়োগ সুবিধা ও বার্ষিক পরিপালন চক্র

৬.১. BIDA ওয়ান-স্টপ সার্ভিস (OSS) প্ল্যাটফর্মের সুবিধা

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (BIDA) হলো দেশি ও বিদেশি উভয় বিনিয়োগের প্রচার ও নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রাথমিক সরকারি সংস্থা [11]। বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে BIDA ওয়ান-স্টপ সার্ভিস (OSS) প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে, যার উদ্দেশ্য হলো সকল সরকারি পরিষেবা একটি একক উইন্ডোর (Single-Window) মাধ্যমে প্রদান করা [40]।

 

OSS-এর গুরুত্ব

BIDA-তে নিবন্ধিত ব্যবসাগুলি সরকারি আর্থিক ও অ-আর্থিক প্রণোদনা এবং দ্রুত অনুমোদন পেতে যোগ্য হয় [11]। BIDA OSS-এর মাধ্যমে উদ্যোক্তারা নাম ছাড়পত্র, ট্রেড লাইসেন্স, ই-টিআইএন, ই-বিআইএন [10], অনলাইন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, ভিসা সুপারিশ, ওয়ার্ক পারমিট, ফায়ার সার্ভিসের NOC এবং বিদ্যুৎ সংযোগের মতো ৩০টিরও বেশি পরিষেবা পেতে পারে [10, 41]।

 

BIDA OSS প্ল্যাটফর্মটি কেবল একটি পরিষেবা একত্রীকরণকারী প্ল্যাটফর্ম নয়; এটি ব্যাক-এন্ডে অনুমোদন প্রক্রিয়াকে ইলেক্ট্রনিকভাবে পরিচালনা করে এবং একটি সময়সীমা (SLA) নিশ্চিত করে [41]। এটি ম্যানুয়াল প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা হ্রাস করে এবং সরকার কর্তৃক জি২বি (Government-to-Business) সেবাগুলোকে ডিজিটালাইজড পরিপালনের দিকে নিয়ে যাওয়ার নীতিকে প্রতিফলিত করে।

 

৬.২. বার্ষিক কর পরিপালন ক্যালেন্ডার (Annual Tax Compliance)

ব্যবসা শুরু করার পর নিয়মিত কর পরিপালন বজায় রাখা আইনি বাধ্যবাধকতা। এনবিআর আয়কর আইন, ২০২৩ অনুযায়ী এই পরিপালন নিশ্চিত করে [23]।

 

কর্পোরেট ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা

কোম্পানির জন্য ‘কর দিবস’ (Tax Day) হলো আয় বছর শেষ হওয়ার পর সপ্তম মাসের ১৫ তারিখ অথবা ১৫ সেপ্টেম্বর (যদি সেই তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বরের আগে পড়ে) [24]। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো কোম্পানির আয় বছর ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়, তবে তার কর দিবস হবে ১৫ সেপ্টেম্বর। নির্ধারিত সময়ে রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হলে জরিমানা ও শাস্তির সম্মুখীন হতে হয় [42, 43]।

 

অগ্রিম আয়কর এবং উৎসে কর

কর্পোরেট করদাতাদের ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে অগ্রিম আয়কর প্রদান নিশ্চিত করতে হয় [23]। এছাড়াও, বেতন, ভাড়া, বা অন্যান্য পরিশোধের ওপর উৎসে কর কর্তন ও সময়মতো সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।

 

এনবিআর বর্তমানে উৎসে কর পরিপালনকে কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। যারা উৎসে কর কাটতে বা সংগ্রহ করতে বাধ্য, তাদের জন্য ‘Withholding Identification Number’ (WIN) নেওয়া প্রয়োজন [23]। WIN প্রবর্তন এনবিআর-এর এই পরিপালন ক্ষেত্রটিকে আরও স্বচ্ছ ও পর্যবেক্ষণাধীন রাখার ইচ্ছাকে প্রকাশ করে। নতুন ব্যবসার জন্য, কর্মী নিয়োগ বা ভাড়ার চুক্তির শুরুতেই WIN সংক্রান্ত পরিপালন নিশ্চিত করা জরুরি।

 

কর্পোরেট আয়কর পরিপালন সময়সীমা (Tax Calendar)

 

সময়কাল প্রয়োজনীয় কার্যক্রম কর্তৃপক্ষ
জুলাই (আয় বছর শুরু) উৎসে কর রিটার্ন দাখিল (মাসিক পরিপালন) এনবিআর [23]
সেপ্টেম্বর (ত্রৈমাসিক) প্রথম কিস্তি অগ্রিম আয়কর প্রদান এনবিআর [23]
ডিসেম্বর (ত্রৈমাসিক) দ্বিতীয় কিস্তি অগ্রিম আয়কর প্রদান এনবিআর [23]
Tax Day (১৫ সেপ্টেম্বর/আয় বছর শেষ হওয়ার ৭ম মাসের ১৫ তারিখ) কর্পোরেট আয়কর রিটার্ন দাখিল এনবিআর [24]
Election

Election Campaign

উপসংহার এবং বিশেষজ্ঞ পরামর্শ

বাংলাদেশে নতুন ব্যবসার জন্য আইন, ট্যাক্স এবং লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া দ্রুতগতিতে ডিজিটালাইজেশনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, যার মূলে রয়েছে BIDA OSS এবং NBR-এর অনলাইন পরিপালন (ই-টিআইএন, ই-বিআইএন) প্রক্রিয়া। তবে, এই প্রক্রিয়াটি ব্যবসার প্রকৃতি এবং নির্বাচিত আইনি কাঠামোর ভিত্তিতে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

 

  1. কাঠামো নির্বাচন ও দায়বদ্ধতা:উদ্যোক্তাদের শুরুতেই এই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে যে একক মালিকানা বা অংশীদারি ব্যবসার প্রশাসনিক সরলতার বিনিময়ে অসীম দায় গ্রহণ করতে হয়। মাঝারি বা বড় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে, প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির সীমিত দায় সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য প্রাথমিক প্রশাসনিক জটিলতা এবং উচ্চতর রেজিস্ট্রেশন খরচ গ্রহণ করা কৌশলগতভাবে অপরিহার্য।
  2. পরিচালক পরিপালন:শিল্প বা পরিবেশগতভাবে স্পর্শকাতর ব্যবসার (যেমন: লাল শ্রেণির শিল্প) ক্ষেত্রে, পরিবেশগত ছাড়পত্র (ECC) অর্জন করা সবচেয়ে বড় সময়সাপেক্ষ বাধা হিসেবে কাজ করে। এই প্রক্রিয়াটি দীর্ঘায়িত হতে পারে, যা ব্যবসার মোট স্টার্ট-আপ সময় বাড়িয়ে দেয়।
  3. ট্যাক্স পরিপালনের কঠোরতা:NBR কর্তৃক ‘Proof of Submission of Return’ (PSR) এবং ‘Withholding Identification Number’ (WIN) প্রবর্তন ইঙ্গিত দেয় যে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ করদাতার শুধুমাত্র নিবন্ধনের চেয়ে নিয়মিত ও সময়মত বার্ষিক পরিপালনের ওপর বেশি জোর দিচ্ছে। নতুন উদ্যোক্তাদের অবশ্যই তাদের বার্ষিক ট্যাক্স ক্যালেন্ডার মেনে চলা এবং অ্যাকাউন্টিং ও ট্যাক্স ডকুমেন্টেশন সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা আবশ্যক।
  4. কৌশলগত কর পরিকল্পনা:স্থানীয় উৎপাদন ও আঞ্চলিক উন্নয়নে সরকারকে উৎসাহিত করার জন্য ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের জন্য কর রেয়াত এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য কম কর্পোরেট কর হার রয়েছে। ব্যবসায়িক কাঠামো এবং অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে এই আর্থিক প্রণোদনাগুলো কাজে লাগানোর জন্য আর্থিক পরিকল্পনা করতে হবে।

 

এই বিশদ আইনি ও নিয়ন্ত্রক মানচিত্রটি নিশ্চিত করে যে নতুন উদ্যোক্তারা কেবল লাইসেন্স সংগ্রহই নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি ও আইনি স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় কৌশলগত ও আর্থিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে সক্ষম হবেন।

 

——————————————————————————–

  1. কোম্পানী আইন, ১৯৯৪ | গঠন নিগমিতকরণ – Laws of Bangladesh, http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-788/part-details-353.html
  2. অংশীদারি ব্যবসায় কি? এর সুবিধাঅসুবিধা কিভাবে শুরু করবেন? (চুক্তিপত্রসহ), https://deshicommerce.com/blog/partnership-business/
  3. বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ | নিয়োগ চাকুরীর শর্তাবলী – Laws of Bangladesh, http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-952/chapter-1032.html
  4. বাণিজ্য সংগঠন আইন, ২০২২ – Laws of Bangladesh, http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-details-1405.html
  5. Powerful Guide to Private Limited Company Registration in Bangladesh | LLC Setup BD, https://bangladesh-consultant.com/private-limited-company-registration-in-bangladesh/
  6. ট্রেডলাইসেন্সইস্যুনবায়নপদ্ধতিঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনhttps://dncc.gov.bd/site/page/b2d1c756-f2d5-4bb5-80cc-e648631dc0a5/%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%A1-%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%B8-%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%81-%E0%A6%93-%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A6%A8-%E0%A6%AA%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%A4%E0%A6%BF
  7. ট্রেড লাইসেন্স | People’s Republic of Bangladesh | গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারhttps://bangladesh.gov.bd/site/page/0d1259d8-29a4-4c1c-a14b-4514f7ef127e/%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%A1-%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%B8
  8. Information About e-TIN – NBR, https://nbr.gov.bd/uploads/publications/226.docx
  9. ভ্যাট নিবন্ধন এবং তালিকাভুক্তি – National Board of Revenue (NBR), Bangladesh, https://nbr.gov.bd/taxtypes/vat-compliance-guides/details/6/ban
  10. BIDA FAQ | Answers to Investment, Visa, Tax & Business Setup Queries, https://bida.gov.bd/faq
  11. Get BIDA Permission Fast: 1 Proven Way to Start Business – Ziva DRA, https://zivadra.com/bida-permission/
  12. Private Limited Company vs Sole Proprietorship in Bangladesh: Which is Right for You?, https://bangladesh-consultant.com/private-limited-company-vs-sole-proprietorship-in-bangladesh/
  13. Complete Guide to Partnership Firm Registration in Bangladesh – ReCom Consulting Ltd., https://recombd.com/partnership-firm-registration-in-bangladesh/
  14. Application of Joint Stock Companies and Firms (RJSC) – Rayhan …, https://rayhannoman.com/blog/application-of-joint-stock-companies-and-firms-rjsc
  15. প্রতিষ্ঠাননিবন্ধনযৌথমূলধন কোম্পানি ফার্মসমূহের পরিদপ্তরhttps://roc.gov.bd/site/page/855dc577-3035-4ca4-b376-49c517099a3e/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%A0%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%A8
  16. RJSC — 25 Essential Forms & Legal Abbreviations (Bangladesh) | VATax BD | Virtual Accounting, Taxation and Business Development, https://vataxbd.com/rjsc-forms-filings/
  17. RJSC: Form-I,https://roc.portal.gov.bd/sites/default/files/files/roc.portal.gov.bd/forms/6ad39f2f_1cd0_4910_acce_7f477f3def68/RJSC%20%20Form-I%20(4).pdf
  18. Registration-Process – যৌথমূলধন কোম্পানি ফার্মসমূহের পরিদপ্তরhttps://roc.gov.bd/site/page/855dc577-3035-4ca4-b376-49c517099a3e/Registration-Process
  19. Affordable Limited Company Registration Fee in Bangladesh | RJSC Cost Guide, https://bangladesh-consultant.com/limited-company-registration-fee-in-bangladesh/
  20. RJSC BUSINESS PROCESS BRIEF,https://app.roc.gov.bd/Guidlines/RJSC_Fees.htm
  21. Registration Fee – Office of the Registrar of Joint Stock Companies and Firms, Divisional office, Chittagong, https://roc.chittagongdiv.gov.bd/en/site/page/%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%A8-%E0%A6%AB%E0%A6%BF
  22. ট্রেডলাইসেন্সইস্যুনবায়নপদ্ধতিঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনhttps://dscc.gov.bd/site/page/f0462cd5-aa92-450c-a9be-7ddee931a3db/%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%A1-%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%B8-%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%81-%E0%A6%93-%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A6%A8-%E0%A6%AA%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%A4%E0%A6%BF
  23. Bangladesh Tax 2024 – KPMG agentic corporate services, https://assets.kpmg.com/content/dam/kpmg/bd/pdf/Tax/KPMG_Bangladesh%20_Bangladesh_Tax%20_2024.pdf
  24. Taxation Handbook – BIDA, https://www.boi.gov.bd/storage/app/uploads/public/674/41b/2f3/67441b2f39589467265395.pdf
  25. VAT/BIN Registration Process in Bangladesh – LegalSeba, https://legalseba.com/bd-services/obtaining-vat-registration-certificate-in-bangladesh/
  26. How to Get VAT Registration in Bangladesh [2025 Guide], https://bangladesh-consultant.com/how-to-get-vat-registration-in-bangladesh/
  27. নতুন মূল্য সংযোজন করের অধীন নিবন্ধন তালিকাভুক্তির পদ্ধতি – NBR,https://nbr.gov.bd/taxtypes/vat-compliance-guides/details/1/ban
  28. কীভাবে নতুন ব্যাংক হিসাব খুলবেন | People’s Republic of Bangladesh, https://bangladesh.gov.bd/site/page/d50fe8d2-4194-4889-8de1-8ab9c8af2545/%E0%A6%95%E0%A7%80%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%A8-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%95-%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%AC-%E0%A6%96%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%A8
  29. হিসাব খোলার বিশেষ নিয়মাবলীন্যূনতম স্থিতি হবে ১৫,০০০.০০ টাকা। দিনের নোটিশ দিয়ে টাকাআর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগhttps://fid.portal.gov.bd/sites/default/files/files/fid.portal.gov.bd/forms/8e36d404_c31e_4ddd_be48_3b19894f933e/Editable_Standard%20bank%20account%20openning%20form.pdf
  30. Corporate income tax (CIT) rates – Worldwide Tax Summaries Online, https://taxsummaries.pwc.com/quick-charts/corporate-income-tax-cit-rates
  31. Bangladesh Corporate Tax Rate – Trading Economics, https://tradingeconomics.com/bangladesh/corporate-tax-rate
  32. আয়করের হারhttps://www.krishibank.org.bd/wp-content/uploads/2023/06/Ortha-Bill2023.pdf
  33. ব্যবসা হইতে আয়http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-1429/act-chapter-print-2339.html
  34. পরিবেশগত ছাড়পত্র গবেষণাগার ফলাফলের জন্য আবেদন – ECC DOE GOV BD – পরিবেশ অধিদপ্তরhttps://ecc.doe.gov.bd/templates/FAQ/
  35. পরিবেশগত ছাড়পত্রের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসমূহhttps://file-chittagong.portal.gov.bd/uploads/98b65b9c-6d4f-4ebc-8203-d5946dc5d5ef//631/84e/877/63184e8772d05372963095.pdf
  36. তারিখ:… – বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষhttps://bfsa.gov.bd/sites/default/files/files/bfsa.portal.gov.bd/notices/b21a4f4b_6c2e_44ed_95bb_13d38b96dc73/2024-02-15-08-56-103a47da28c41e2fa17058d1dd1f15b8.pdf
  37. অনলাইন আবেদনপেটেন্ট, শিল্পনকশা ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরhttps://dpdt.gov.bd/site/page/9fb38fb8-6465-4b33-9808-b48bdfc65bcc/-
  38. ৪টি সহজ ধাপে বাংলাদেশে ট্রেডমার্ক নিবন্ধন করুন – Daptari Consultancy,https://daptari.com/2023/08/23/trademark-registration-process-in-bd/
  39. বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ | নিয়োগ চাকুরীর শর্তাবলী – Laws of Bangladesh, http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-952/chapter-details-1032.html
  40. One Stop Service by Bangladesh Investment Development Authority (BIDA), https://bidaquickserv.org/articles/one-stop-service
  41. OSS Services – BIDA, https://www.boi.gov.bd/oss-services
  42. Key LLC Tax Deadlines in 2025 | 1-800Accountant, https://1800accountant.com/blog/llc-tax-deadlines
  43. Every Tax Deadline You Need To Know – TurboTax, https://turbotax.intuit.com/tax-tips/tax-planning-and-checklists/important-tax-deadlines-dates/L7Rn92V1d